তথ্য প্রযুক্তির মুক্ত প্রবাহে ভাসছে বিশ্ব তারই সাথে পাল্লা দিয়ে চলছে আমাদের দেশ। আকাশ সংস্কৃতির ব্যপ্তি ঘটছে দুনিয়া ব্যপি, প্রান্তিক জনগনের কাছেও পৌছে গেছে সেই ঢেউ। আর এই প্রযুক্তি কাজে লাগিয়ে এক শ্রেনীর টাউট বাটপার সাধারণ মানুষ কে বিভ্রান্ত করছে এবং প্রতারিত করছে। এই থেকে সতর্ক থাকতে আপনাকে জানতে হবে টিভি চ্যানেল কাকে বলে, কত প্রকার ও কি কি ?
প্রথমেই জেনে নেই স্যাটেলাইট টিভি চ্যানেল কি।
স্যাটেলাইট টেলিভিশন চ্যানেল কৃত্রিম উপগ্রহের মাধ্যমে টেলিভিশনের অনুষ্ঠান সম্প্রচার ব্যবস্থা। স্যাটেলাইট চ্যানেল ১৯৯০ সালের পূর্বে বাংলাদেশে প্রচলিত ছিল না। ১৯৯২ সালের ২৯ সেপ্টেম্বর মার্কিন সংবাদ চ্যানেল সিএনএন বিটিভি চ্যানেল ব্যবহার করে এখানে প্রতিদিন কয়েক ঘণ্টার অনুষ্ঠান সম্প্রচার আরম্ভ করে। একই বছর বিবিসিও এটা শুরু করে। স্যাটেলাইটের মাধ্যমে প্রচারিত অনুষ্ঠানাদি দেখার জন্য সাধারণ ঘরবাড়িতে ডিশ অ্যান্টেনা ব্যবহারের অনুমতি পাওয়াতে বাংলাদেশি দর্শকদের বহির্বিশ্বের অনুষ্ঠানাদি দেখার নতুন সুযোগ সৃষ্টি হয়। ১৯৯২-৯৫ সালে বাংলাদেশের বাড়িঘরে ১০টি আন্তর্জাতিক টিভি চ্যানেল দেখা যেত। ২০০১ সালে এই সংখ্যা ৫০ ছাড়িয়ে যায় এবং বর্তমানে তা ১০০’রও উপরে।
স্যাটেলাইট টেলিভিশন চ্যানেলসমূহ জনসাধারণের জন্য বিনোদনের সবচেয়ে জনপ্রিয় মাধ্যম হয়ে দাঁড়িয়েছে। ১৯৯২ সালে বিবিসি এবং সিএনএন ছাড়া আন্তর্জাতিক চ্যানেলগুলির মধ্যে মূলত স্টার টেলিভিশন নেটওয়ার্ক, জি টিভি নেটওয়ার্ক, ভারতীয় টিভি এবং পাকিস্তানি টিভি প্রদর্শিত হতো। কিছু প্রারম্ভিক সংযোগ গ্রহণকারী উচ্চ মূল্যে ডিশ অ্যান্টেনা ক্রয় করে তাদের বাড়ির ছাদে সেগুলি স্থাপন করে। পরবর্তীকালে, সম্ভাবনাময় লাভজনক ব্যবসার আভাস পেয়ে কিছু উদ্যোক্তা বেসরকারি ক্যাবল নেটওয়ার্ক-এর ব্যবসা পরিচালনা আরম্ভ করে। শীঘ্রই এসকল নেটওয়ার্ক দেশব্যাপী ছড়িয়ে পড়ে। সময়ের সাথে সাথে, বিশেষত প্রধান শহরগুলিতে ক্রমেই এসব চ্যানেলের গ্রাহকসংখ্যা বাড়তে থাকে।
গত শতকের নববই দশকের শেষে চ্যানেল আই, এটিএন বাংলা বাংলাদেশের বেসরকারি টিভি চ্যানেল হিসেবে কার্যক্রম শুরু করে। এনটিভি ও একুশে টিভি খবরের বৈচিত্রতা ও নানা ধরনের অনুষ্ঠানসূচী নিয়ে এসে জনপ্রিয়তা লাভ করে।
সরকারের অনুমতি নিয়ে একটি স্যাটেলাইট টিভি চ্যানেল করতে কয়েক কোটি টাকার প্রয়োজন এবং তা চালিয়ে রাখতেও কোটি টাকার প্রয়োজন হয়। পাশাপশি লোকবল তো আছেই।
সরকার অনুমোদিত স্যাটেলাইট টিভি চ্যানেল এর তালিকা
ডিজিটাল প্রযুক্তির ছোয়ায় স্যাটেলাইটের পাশাপাশি আসছে ইন্টারনেট প্রটোকল (আইপি টিভি) যা নিজস্ব সর্ভারের (লিংক) মাধ্যমে নিদ্রিষ্ট এ্যাপস, ওয়েবসাইট ও ক্যাবলে ব্রটকাষ্ট করা হয়। এ জন্য প্রয়োজন হয় হাইস্পিট ইন্টারনেট ও হাই কনফিগার পিসি ও বিভিন্ন সফটওয়ার।
একটি আইপি টিভি করতে সর¦নিন্ম ৫০ লক্ষ টাকা থেকে শুরু করে কোয়ালিটি অনুযায়ী কয়েক কোটি টাকা প্রয়োজন।
এর বাইরে যারা ফেইজবুকে বা ইউটিউবে সংবাদ ভিডিও আপলোড করে টিভি পরিচয় দেয় তা হাস্যকর ও মানুষকে বিভ্রান্ত করা এবং প্রতারণাও বটে। বর্তমানে কিছু অসাধু লোক ফেইজবুকে একটি আ্ইডি খুলে টিভি নাম দিয়ে ব্রান্ডের যেকোন একটি চ্যানেলের লোগো তৈরী করে একটি বুম (মাইক্রোফোন) হাতে নিয়ে যদু-মধু সবার স্বাক্ষাতকার নিতে ছুটে চলে। আর সাধারণ মানুষ না বুঝে বুম দেখে মনে করে কোন টিভি চ্যানেল। এদের না আছে কোন ঠিকানা, না আছে একটি লাইভ টিভি ওয়েব সাইট। এবার যদি তার টিভি কোথায় কোন মাধ্যমে যেমন, এ্যাপস, ওয়েবসাইট, ডিস ক্যাবেল ব্রডকাষ্ট সম্প্রচার না হয় তবে তাকে কি ভাবে টিভি চ্যানেল বলা হয় ? তাহলে তো যার ফেইজবুক আইডি আছে সবাই একটি টিভি চ্যানেলর মালিক।
এইসমস্ত প্রতারকদের কারনে পেশাধার ও স্যাটেলাইট টিভি চ্যানেলের সাংবাদিকরা বিভ্রতকর অবস্থায় পরছে। আসুন সবাই মিলে এদের প্রতিহত করি। সতর্ক থাকি। মনে রাখবেন আইডি কার্ড আর বুম থাকলেই সাংবাদিক নয়। আগে যাচাই করুন, তারপর সাংবাদিক বা টিভি চ্যানেল বলুন। গণহারে সব কিছু এক পালায় মাপবেন না। সঠিক নির্নয় করা আপনার দায়িত্ব। আর যদি এভাবে সবাইকে গুলিয়ে ফেলেন তবে এক সময় সত্যিকার প্রতিভাবানরা হারিয়ে যাবে।
লেখক : এস এম পলাস
সংবাদ কর্মী